অণুগল্পঃ উপরি

গাড়িতে উঠে বসেছি মাত্র; মিষ্টি হেসে মেয়েটি কাছে এলো
-কিছুক্ষণ আগে আপনার সাথেই কি ফোনে কথা বলেছি?
-আপনার ভুল হচ্ছে; মৃদু হেসে জবাব দিলাম
-ও আচ্ছা
কথা না বাড়িয়ে সে একটু দূরে সরে কারো জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। বয়স তিরিশ বত্রিশ হবে। স্বাভাবিক সাজসজ্জা। হাবেভাবে বেশ রুচির ছাপ আছে।

পাশের এক রিকশাচালক কী একটা মন্তব্য করলো বুঝা গেলনা। সম্ভবত মেয়েটির প্রতি ঋণাত্মক কিছু। গাড়িটা সেইফ পার্ক করে কেন জানি কী মনে করে মেয়েটার কাছে গেলাম। এই আচরণ নিজের কাছেই কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হলেও আফ্রিকান সংস্কৃতির প্রচ্ছন্ন প্রভাবে তা সহজ হয়ে গেলো।
-আজ বেশ ঠান্ডা পড়েছে;
গায়ে পড়ে কথা বলা শুরু করলাম

-ঠান্ডা সহ্য করতে পারেন না? মুচকি হেসে মেয়েটা প্রশ্ন করলো
-তা কিছুটা
-কেন?
-মরুভূমিতে অভ্যস্ত; তাই
-মরুভূমিতে কি করেন?
-বাড়ি বাড়ি রুম হিটার সাপ্লাই দেই

মেয়েটা শব্দ করে হেসে উঠলো। এটা দেখে দুই রিক্সাওয়ালা টিপ্পনি কাটল
-তো এখানে কি করেন?
-একজনের জন্য অপেক্ষা করছি; জবাব দিলাম

অল্প দূরে এক লোক ঝালমুড়ি বিক্রি করছিলো। চোখে চোখ পড়তেই সে মুচকি হেসে বললো
-মামা দেবো এক ঠোঙ্গা?
ঝালমুড়িওয়ালার আমন্ত্রণ মেয়েটাকে রেফার করে বললাম;
-দেবে এক ঠোঙ্গা?
আমার নিমন্ত্রণে সে একটু অবাক হয়ে জবাব দিলো;
-জ্বী, আ…চ…ছা

মুড়ি খেতে খেতে জানতে চাইলাম,
-বাড়ি আশেপাশেই?
-হুম;
মফস্বল শহরে বড় হয়েছি। শেষ পর্যন্ত মাস্টার্স পরীক্ষাটা দেয়া হয়নি। ঢাকাতে বছর আটেক। শুরুতে একটা বেসরকারি অফিসে জব করেছি।কামরাঙ্গি চরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি।
-আচ্ছা
-তো আপনি কি করেন?
-হিউমেনিটেরিয়ান
-সেটা আবার কি?
-টেলিভিশনে দেখেননি? যুদ্ধ লেগেছে; মানবিক বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য জতিসংঘ বা অন্যান্য লোক কাজ করছে। ওরা হিউমেনিটেরিয়ান
-একটু আগে না বললেন, রুম হিটার সাপ্লাই দেন!

মুড়িওলার হাত থেকে কৌটা নিয়ে স্পেশাল করে সে আমার জন্য আরেক ঠোঙ্গা ঝালমুড়ি বানালো।
তার জন্যও; নিজেরটাতে অনেক ঝাল যোগ করলো! বুঝতে বেগ পেতে হলোনা দুজনের মধ্যে পূর্ব পরিচয় আছে।

-এখন কি করেন?
মেয়েটা আগেই উল্লেখ করেছে যে, সে একটা বেসরকারী অফিসে জব করেছে। এখন কী করে সেটা না বলার যথেষ্ট কারণ আছে বুঝেও তাকে বোকার মতো প্রশ্নটা করে বসলাম।

সে আমার প্রশ্নের জবাব দেয়ার সুযোগ পেলোনা; অথবা দিলনা। তার মোবাইলে কল এসেছে।
আগে যে ফোন করেছিলো হয়তো সে; অথবা অন্যকেউ।
-আমরা তিনজন
“ওরা তিনজন”; ফোনের অন্যপাশ থেকে আসা এই সংবাদে মেয়েটার মন ভার হলো।

ওদের কথাগুলো আমি বেশ পরিষ্কার শুনছিলাম।

“উহ, ঝাল! চোখে জল চলে এসেছে”, আমাকে শুনিয়ে বলতে বলতে মেয়েটা চলে গেলো।

কিন্তু অন্যপাশ থেকে আসা শেষ কথাটাই কেবল আমার কানে বাজতে লাগলো,

“সমস্যা নাই; উপরি পাবি!”

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৭ টি মন্তব্য (লেখকের ৩টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৬-০৮-২০১৮ | ২১:১১ |

    Smile চমৎকার উপস্থাপন মি. মিড ডে ডেজারট। জানি মরুভূমিতে রাত্রিকাল শীতকাল। রুম হিটারের শব্দ পড়ে ঘর ভর্তি প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরমে যেন উত্তপ্ত হয়ে উঠলাম। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Razz.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • মিড ডে ডেজারট : ০৭-০৮-২০১৮ | ৯:৪০ |

      মন্তব্যে আনন্দিত!

      অশেষ ধন্যবাদ মিঃ মুরুব্বী।

      GD Star Rating
      loading...
      • মুরুব্বী : ০৭-০৮-২০১৮ | ৯:৪৫ |

        শুভ সকাল মি. মিড ডে ডেজারট। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

        GD Star Rating
        loading...
  2. মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন : ০৬-০৮-২০১৮ | ২১:২০ |

    ** অনেক সুন্দর গল্প… https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • মিড ডে ডেজারট : ০৭-০৮-২০১৮ | ৯:৪২ |

      মন্তব্যে আনন্দিত!

      আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

      GD Star Rating
      loading...
  3. রিয়া রিয়া : ০৬-০৮-২০১৮ | ২২:১৬ |

    প্রেজেন্টেশন সুন্দর হয়েছে মিড দা। Smile

    GD Star Rating
    loading...
    • মিড ডে ডেজারট : ০৭-০৮-২০১৮ | ৯:৪৬ |

      মন্তব্য পেয়ে খুব খুশি হয়েছি!

      আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

      GD Star Rating
      loading...