ভালবাসতে দোসরের বাড়ানো হাত না পেলেও দিব্য চলে যায়। সে রকম মানসিক গঠন থাকলে, বেঁচে থাকার পরিসরে সারাটা জীবন দেবদাস বনে হাহুতাশ করে কাটিয়ে দেবার কোন প্রয়োজন পড়েনা। সে আবার কেমন প্রেম যা জীবনকে আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত করার বদলে কালোয় কালোয় ঢেকে দেয়! আমি যদি সত্যি ভালবেসে থাকি, তাহলে ঘটনা যা- ই ঘটুক না কেন, আমি আমার ভালবাসার প্রতি সশ্রদ্ধ থেকে, তারপর যা করার তা করবো। নিজের আবেগের প্রতি যদি আমি নিজে সশ্রদ্ধ না থাকি, তবে তো যে হাত ছাড়িয়ে পালিয়েছে সে তো ঠিকই করেছে বলতে হবে। কারণ শ্রদ্ধার বনেদ ছাড়া ভালবাসা দাঁড়াতে পারেনা।
রোজকার জীবনে যা দেখি, অতি কষ্টে মুখে আগুন তুলে প্রণয়কে পরিণয়ের ছামনাতলায় টেনে নিয়ে গিয়ে যে বাহাদুরিটুকু হলো, তার লাভের গুড় কখন যেন পিঁপড়েয় এসে সাবড়ে দেয়।
বছর কতক না পেরোতেই দুজনের উল্টোমুখে যাত্রা। আমি একদমই একথা বলছিনা যে,তাল ভঙ্গ হয়ে সুর কেটে গেলেও কোনক্রমে ধামাচাপা দিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া খুব সার্থকতার ব্যাপার। প্রত্যেকেরই নিজের জীবনকে নিজের মতো করে সাজাবার পরিপূর্ণ অধিকার আছে। তাই যাঁরা মানিয়ে নিতে না পেরে উল্টোপথে হাঁটা দিলেন, তাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদের মতো করে নিয়েছেন। এব্যাপারে কারো কিছু বলার থাকতে পারে বলে মনে করিনা।
আমি তাঁদেরও শ্রদ্ধা করি, যাঁরা নিজেদের মধ্যেকার মনোমালিন্য বাইরে আসতে না দিয়ে সংসারের দাবি মিটিয়ে চলেন একদম মুখ বুজে। এটাও কম বড় পরীক্ষা নয়। যাঁরা নিজের টুঁটি চিপে ধরে আমৃত্যু সংসারের দাবি চুকিয়ে চলেন, তাঁদের স্যাক্রিফাইসকে কুর্নিশ। এঁরা পরস্পরেরআন্ডারস্ট্যান্ডিংয়েই এমত জীবনযাত্রা যাপন করে চলেন।
হিপোক্রিট মনে হয় তাঁদের যাঁরা উল্টোপথে হাঁটা দেবারও সাহস রাখেন না, আবার নিজের বিবাহিত পার্টনারকে সসম্মানে সংসারে প্রতিষ্ঠা করতেও জানেন না। এঁরা বাড়িতে বৈধ সম্পর্ক রেখেও বহির্মুখী, বহুগামি/ গামিনী। এঁরা না পারে বৈধ সম্পর্ককে সম্মান করতে, না পারে বৈধতা বহির্ভূত সম্পর্ককে ন্যুনতম গুরুত্ব দিতে। শ্রদ্ধা, সম্মান তো অনেক দূরের বস্তু। এঁরা নিত্যদিনের কাজকর্ম, বাজারহাট, চিকিৎসাদি, শখ শৌখিনতা, লোক লৌকিকতা, পি. এফ,গ্র্যাচুইটি, পেনশন, এল.আই.সি সর্বক্ষেত্রে নির্ভূলভাবে বৈধ পার্টনারের নাম বসাতে বিন্দুমাত্র ভুল করেন না, অথচ চক্ষু চর্মহীনভাবে দিনের পর দিন ঠকিয়ে যান বিবাহ বহির্ভূত পার্টনারটিকে।
এসব ক্ষেত্রে এঁদের কিছু বাঁধা লব্জ থাকে, যা দিয়ে দূর্বল করে ফাঁদে ফেলা হয় ভিকটিমটিকে :
১) কি করবো, সংসার না করলে নয় তাই করি, অথচ জীবনটা আমার শেষ হয়ে গেছে
২) কোনদিক দিয়ে ও আমার উপযুক্ত নয়
৩) আত্মীয়স্বজন, কোলিগদের কাছে পরিচয় দিতে মাথা কাটা যায়
৪) সংসারে টেকা যায়না, নোংরার হদ্দ, আমার বাড়িতে একদিন গেলে বমি করে ফেলতে হবে
৫) আমার সুবিধে অসুবিধের দিকে মোটে নজর নেই
৬) স্বার্থপরের চুড়ান্ত, নিজেরটুকু ছাড়া আর কিছু বোঝেনা
৭) আমাদের দাম্পত্য সম্পর্ক তো বহুযুগ আগে মরে গেছে। ওর সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই
৮) শ্বশুরবাড়ির পেষনে মারা গেলাম
৯) এমন একটা বিচ্ছিরি বিয়ের কারণে আজ আমি সম্পূর্ণ একা।
১০) আর বাঁচতে ইচ্ছে করেনা। কয়েকবার সুইসাইডের এ্যটেম্প্ ও নিয়েছিলাম। তুমি ছাড়া আমাকে কেউ আর বাঁচাতে পারবে না।
১১) এখন পার্মানেন্ট ডিপ্রেশনের শিকার। ওষুধ খেতে হয়। আমাকে দেখার কেউ নেই।
১২) আমাকে একটু আশ্রয় দেওয়া কি যায়না? একটু নির্দোষ মন খুলবার জায়গা?
এবম্বিধ শতেক নিন্দামন্দর পর অমোঘটি ছাড়া হয় :
দুশ্চরিত্র, কতজনের সঙ্গে যে ঢলিয়ে বেড়াচ্ছে… ইত্যাদি, ইত্যাদি।
একে কেউ প্রশ্ন করেনা যে, তুমি বাছাধন/ধনি এখন কি করছো? চণ্ডীপাঠ??
এতক্ষণে হাবা বনে যাওয়া টার্গেটটি একেবারে আবেগে – প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে কাত্, ঠিক ততদিন পর্যন্ত যতদিন না শিকারির নতুন টার্গেট জোগাড় হয়ে যাচ্ছে। ফলতঃ যা পেনাল্টি দেবার অবৈধ পার্টনার তো দেয়ই, দিতে বাধ্য। বুঝে, বা না বুঝে আগুনে হাত দিলে তো জ্বলতে পুড়তে বাধ্য। কিন্তু ভেবে দেখুন সেই বৈধ পার্টনারটির কথা। সব জেনে শুনে কিভাবে, কেমন করে এই অপমানের জীবন মেনে নিয়ে রোজ রোজ এক টেবিলে গা – ঘেঁষাঘেঁষি বসে মাছের ঝোল ভাত খাচ্ছেন, একমাত্র বিধাতাই জানেন।
আমি স্ত্রী – পুরুষ উভয়ের কথাই বললাম।
_______________
© রত্না রশীদ ব্যানার্জী।
loading...
loading...
বিশ্লেষণের সাথে একমত দিদি ভাই। নমষ্কার।
loading...
ধন্যবা, রিয়া।
loading...
ভালবাসতে দোসরের বাড়ানো হাত না পেলেও দিব্য চলে যায়। প্রেম জটিল অংক বন্ধু।
loading...
একদম ঠিক বলেছেন । ভাল থাকুন ।
loading...