ইন্টারভিউ: অণুগল্প

ইন্টারভিউ অণুগল্প

আব্দুল মতিন ইন্টারভিউর জন্য যখন মেসের রুম থেকে বের হল, চারদিক কাঁপিয়ে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। ছোট্ট ফোল্ডিং ছাতাটি মেলে দিয়ে বাস ষ্ট্যাণ্ডের দিকে রওয়ানা হল। ভাগ্যিস রুম মেটের কাছ থেকে এটি ধার চেয়ে সাথে এনেছিলো।

ভাঙা ইটের রাস্তাটি এবড়ো থেবড়ো। ইতোমধ্যেই জল জমেছে বেশ। কালি করা জুতোর সামনের ডান পাশে কাদা লেগে গেছে। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো ওটা দেখে। আজই বৃষ্টিটা নামার দরকার ছিলো?

বাস ষ্ট্যাণ্ডে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্যান্টের নীচের দিকটা ভিজে একাকার। কাদা এবং বালির ছিটে কেমন জাঁকিয়ে বসেছে সেই জায়গাটুকুতে। কালো প্যান্ট বলে রক্ষে।

বাসে উঠে বসার সিট পেলো না। একহাতে ফাইল এবং অন্যহাতে ভেজা ছাতা। ছাতার পানি পাশের সীটে বসে থাকা একজনের শরীরে লাগতেই কেমন রাগত স্বরে অদ্ভুত অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। ফাইলসহ বাসের রড ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিরক্ত হচ্ছে আব্দুল মতিন। একবার ভাবে, মেসেই ফিরে যায়। দরকার নেই আজ ইন্টারভিউ দেবার। যে ক’টা টিউশন রয়েছে, তাতেই তো বেশ চলছে। কি দরকার হুদা কামে গোলামীর জিঞ্জির পড়বার। পরক্ষণেই দু’টি মায়াবী চোখের মৃদু তিরষ্কার মানসপটে ভেসে উঠে। অভিমানী দু’টি ঠোট ঈষৎ বেঁকে আছে… অনিন্দ্য সুন্দর এক মুখচ্ছবি আব্দুল মতিনকে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে সাহায্য করে। তাঁকে যে দু’মাস সময় বেঁধে দিয়েছে এই মুখের অধিকারিণী। এরপর সে আর নিজের পরিবারের গুরুজনদেরকে তাকে বিয়ে দেবার ব্যাপারে থামিয়ে রাখতে পারবে না।

পিঠের কিছু অংশও ভিজে গেছে। একটু একটু শীত লাগছে। জুতোর ভিতরেও মোজা ভিজে চুপচুপা। প্রচন্ড এক বিরক্তি সাথে নিয়ে এক ঘন বর্ষায় বাসের রড ধরে দাঁড়িয়ে থাকা আব্দুল মতিন সবার অলক্ষ্যে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। একটু কি কেঁপেও উঠে? তবে আশেপাশের কেউই- এমনকি ওর শরীরের সাথে ঠেক দিয়ে দাঁড়ানো টেকো ভদ্রলোকও কিছুই টের পেলেন না। এমন হাজারো দীর্ঘশ্বাস এবং ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠা বাসের প্রতিটি মানুষের কাছেই মামুলি ব্যাপার। হরহামেশাই ঘটছে। তারা কি ওর মত এগুলো অনুভব করে?

একজন আব্দুল মতিন ইন্টারভিউ দিতে যাবার পথে চলন্ত বাসের ভেতর রড ধরে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে। সামনে দৃষ্টি চলে না, পিছনেও ঝাপসা। আর ভাবনার এই মুহুর্তটাও কেমন স্যাঁতস্যাঁতে আর অবরুদ্ধ মনে হয় ওর কাছে।।

——————————–
#ইন্টারভিউ_অণুগল্প_৩০৬

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৩ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২০-০৭-২০১৮ | ১১:৩০ |

    জীবনের এই লড়াই এখন শুধু কষ্ট কল্পনা বা অণুগল্প নয়; চাকুরী প্রার্থী প্রতিজনের নিত্য যন্ত্রণার সঙ্গী। Frown

    GD Star Rating
    loading...
  2. মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন : ২০-০৭-২০১৮ | ২২:৫৫ |

    * বস্তুধর্মী লেখা ভালো লেগেছে।

    শুভরাত্রি।

    GD Star Rating
    loading...
  3. রিয়া রিয়া : ২০-০৭-২০১৮ | ২৩:০০ |

    আমাদের জীবনটা এতো জটিল কেনো সেটাই ভাবি। Frown

    GD Star Rating
    loading...