ছি: তুমি কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী!

ছি: তুমি কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী!!

আমি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে কারো বিনা প্ররোচনায় এই মর্মে স্বীকার করছি যে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পেটানো রাষ্ট্র ও জাতির জন্য খুবই ইতিবাচক একটি কাজ হয়েছে। কোটা আন্দোলনকারীদের এভাবে পেটানোকে পূর্ণ সমর্থণ করি। আশাকরি, পেটানোর এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন অবশ্যই একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আন্দোলন। বিশেষত নির্বাচনের বছরে এ আন্দোলনকে কোনো যুক্তিতেই হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন যাবৎ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা আন্দোলন করে আসছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে যখন কোটা সংস্কারসহ সকল আন্দোলন বন্ধ রাখা উচিত সেখানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে আন্দোলনকে জোরদার করা হচ্ছে কার স্বার্থে!

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে সম্পূর্ণ ‘কোটা’ বিষয়টিই বাতিল করে দিয়ে আন্দোলনকারীদের পড়ালেখায় মন দিতে বলেছিলেন। অথচ তারা পড়ালেখায় মন না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের সরকারি প্রজ্ঞাপনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে। এই স্পর্ধা তারা পায় কোথায়! প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা হতে সরকারি প্রজ্ঞাপন কোনোক্রমেই বড় বিষয় বা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেনা। কোটা আন্দোলনকারীরা প্রজ্ঞাপনকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ করে বিশ্বনেত্রী সকল শিক্ষার্থীদের কাছে মাদার অব এডুকেশন হিসেবে সম্মানিত প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক-পরিবেশক স্যার ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের মত সহজ সরল বিজ্ঞানীকেও বিভ্রান্ত করেছে। স্যারের ওপরে আঘাত মানেই মুক্তিযুদ্ধের ওপরে আঘাত, বাংলাদেশের উপরে আঘাত- এ চিরসত্য জানার পরেও ছলে-বলে-কলে-কৌশলে স্যারকে কোটা সংস্কারের পক্ষে কথা বলতে বাধ্য করেছিলো এ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। কোটা বাতিল প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ভাষণের পরে স্যারের সকল মোহ কেটে যায়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের জঘন্য রূপটি স্যারের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবং তার শিশুর মত সরল মনেও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপরে হড়হড় করে বমি করে দেবার ইচ্ছা জাগ্রত হয়। আমার খুব ইচ্ছে করে স্যারের পাশে দাঁড়িয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হড়হড় করে বমি করে দেই। তবে খুব কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছি, বমি করার সময়ে ভারসাম্য হারিয়ে যদি স্যারের গায়ে করে দেই।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের যারা পিটিয়েছে তাদের প্রতি স্যালুট। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে টিফিনের টাকা জমিয়ে তা দিয়ে বাঁশ, হাতুড়ি, চাপাটি কিনে আন্দোলনকারীদের পিটিয়েছে। কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর জানা খুব জরুরী যারা কোটার জন্য চাকরি পাবেনা বলে হাহুতাশ করে তারা আন্দোলন করার টাকা পায় কোথায়!

দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে যারা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের আচ্ছামতো পিটিয়েছে; তাদের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ষড়যন্ত্র করেছে। চক্রান্তের জবাব দিতে উজ্জীবিত সোনার ছেলেরা নিজের জীবন বাজি রেখে আন্দোলনকারীদের পিটাতে ধাওয়া দিয়েছে। ধাওয়ার মুখে আন্দোলনকারীরা পালিয়ে না গিয়ে ইচ্ছে করেই একটু বেশী বেশী মার খেয়েছে। এ ঘটনার কভারেজ দিতে গিয়ে মিডিয়াও প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা পালন করেছে। মার দেওয়াকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করলেও মার খাওয়াকে বেদনাদায়ক ঘটনা হিসেবে উপস্থাপন করেছে। মার খাওয়া যে স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারি সে বিষয়ে একটা সম্পাদকীয় দূরে থাক একটা নিবন্ধও প্রকাশ বা প্রচার করেনি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা এবং এ আন্দোলনে পাকিস্তানের অর্থায়ন রয়েছে কি-না তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। বিএনপি’র মত দল যেখানে পুলিশের অনুমতি ছাড়া কোনো আন্দোলন করেনা, এমন কি বিএনপি নেতারা হাগুমুতো পর্যন্ত করেনা, সেখানে কোটা আন্দোলনকারীরা অনুমতি ছাড়া আন্দোলন করার সাহস পায় কোথা থেকে, কার কাছ থেকে! প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য কোন পরিকল্পনার অংশ বাস্তবায়নে তারা এ আন্দোলন করছে!

নিজের কথাই বলি, এক ঘণ্টার পথ যখন যানজটের কারণে চার ঘণ্টায় পাড়ি দিতে হত তখন খুব বিরক্ত হতাম। প্রধানমন্ত্রী সকল দুঃসময়ে জাতির সামনে আশার বাতি নিয়ে উপস্থিত হন। আমার মত ঢাকাবাসীদের অনেকেই যখন চরম বিরক্ত তখনই সত্যটা সামনে এনে যানজট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানালেন, লন্ডনেও যানজট হয়, কখন গন্তব্যে পৌছবে তার ঠিক নেই। সে থেকে যানজটকে ভীষণ উপভোগ করি। যানজটে আটকে থেকে সবসময় ভাবি লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসের সামনে দিয়ে যাচ্ছি। এক একটা শুক্রবারে যখন রাস্তায় যানজট পাইনা, মনটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে- রাজধানীটা আবার ঢাকা হয়ে গেলো না তো!

বাজারে যখন চালের দাম বাড়ছে বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি তখন তিনি জানালেন চালের দাম মোটেও বাড়েনি। এরপর ৪২টাকা কেজির চাল মাত্র পঞ্চাশ টাকা দিয়ে কিনে হিসেবে কষে দেখি সত্যিই তো বাড়েনি, আগে ৪২টাকায় পেতাম ১কেজি চাল, তার পরিবর্তে পঞ্চাশ টাকায় পাই ১০০০গ্রাম চাল। অথচ পাপী মনে কত কিছু না ভেবেছি।

দেশের ভিতরে ফ্যাসিজম চলছে, বাংলাদেশ ফ্যাসিস্ট দেশে পরিণত হয়েছে- এমন একটা অপপ্রচার দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এর থেকে বড় মিথ্যা আর হয়না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র রয়েছে, সংসদে জাতীয় পার্টির মত শক্তিশালী একটি বিরোধী দল রয়েছে, সকল নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে- তারপরেও উনাদের বিশ্বাস হয়না দেশে গণতন্ত্র রয়েছে। এভাবে ফ্যাসিজমের কথা বলা ঘৃণ্য অপরাধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকারের প্রতি চক্রান্তের অংশ। যারা ফ্যাসিজমের কথা বলে, বাকস্বাধীনতা নেই বলে দাবি করে- তারা কোন যুক্তিতে এ কথা বলে তা না শুনেই কঠিন মারের ব্যবস্থা করতে হবে। এদের চিহ্নিত করে ধরে ধরে পিটাতে হবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ফ্যাসিজমের গুজব প্রচারকারীদের পিটানি দেয়া গণতান্ত্রিক অধিকার।

পুনশ্চ: কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের সুমতি কামনা করছি। রিমান্ড শেষে তারা সরকারের কঠোর সমালোচক হিসেবে এক একজন ইমরান এইচ সরকার হয়ে বেরিয়ে আসবে। তারপর কোটা সংস্কার আন্দোলনও চলবে, কোটাও চলবে।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৩ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৬-০৭-২০১৮ | ৮:৩৪ |

    দ্বিমত নেই। অতীত বিশ্লেষণে পাকাপাকি ভাবে দৃশ্যমান কাহিনী এমনটাই ইঙ্গীত করে।

    GD Star Rating
    loading...
  2. রিয়া রিয়া : ০৬-০৭-২০১৮ | ১০:৫১ |

    আপনার কথায় যুক্তি আছে দাদা।

    GD Star Rating
    loading...
  3. সাইদুর রহমান১ : ০৬-০৭-২০১৮ | ১২:২৯ |

    আমিও কোটা সংস্কারের পক্ষে তবে সেটা দেশের সবকিছু স্থবির করে নয়। ঢাকার শহর এমনিতেই জ্যামে ভরপুর থাকে, চলাফেরা যায়না সেখানে কোটা নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক ক্ষতির জনমানুষ। প্রোপার নিয়ম মেনে সরকারের সাথে কথা বললে হয়তো বা শৃংখল নিয়ম মেনে আন্দোলন করলেও বোধহয় কার্যকর ভূমিকা নেওয়া যায়।

    GD Star Rating
    loading...