অভ্র'র প্রতিদান-পর্ব-২

অভ্র'র প্রতিদান
রুমমেটদের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা অভ্র’র নিত্য দিনের রুটিন হয়ে গ্যাছে, আজও ঠিক তেমনটিই হলো। নিতু ফেরদৌস বাবু রিপন বেশ আনন্দেই আছে। আনন্দ হইচই করতে করতে নিউমার্কেট এলাকায়। প্রথমে ঘুরেঘুরে দেখছে কে কি কিনবে। টিনসেডের ছাউনী করা মার্কেটটি বেশ বড়সড়। টি-শার্টের দোকানে ঢুকে নিতু আর বাবু দু’জনে দুটি টি-শার্ট কিনে দোকানদারকে টাকা দিতে না দিতেই হঠাৎ করে পড়ন্ত বিকেল যেন চৈত্রের খা খা দুপুর হয়ে গেলো। মূহুর্তেই হইচই। লোকদের ছুটোছুটি, যে যার মতো ছুটে চলেছে। নিতু আর বাবু দৌড়ে বের হলেও ফেরদৌস আর রিপন এখনো বের হতে পারেনি। বাইরে থেকে নিতু আর বাবু দেখে যাচ্ছে মার্কেটের ভেতর থেকে কালো ধোয়ার বের হচ্ছে, যেন পৃথিবী গহীন অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে। চিন্তায় দুজনে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে। আহাজারি আর চিৎকারে নিরব হয়েছে প্রকৃতি। ততক্ষণে ফায়ার সার্ভিস এসে পৌছে কিন্তু তার আগের মার্কেটের অধিকাংশ দোকান পুড়ে ছাই। ফেরদৌস আর রিপনকে চিৎকার করে ডেকে চলেছে নিতু আর বাবু। কিন্তু জবাব আসছে না। ফায়ার সার্ভিসের জনবল ভেতর থেকে বিপদে আটকে পড়া মানুষ গুলোকে বের করতে শুরু করে দিয়েছে। এ্যাম্বুলেন্স এসে পৌছে কয়েক জোড়া।

নিতু আর বাবু দৌড়ে এ্যাম্বুলেন্স কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যদিও একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে। তাকিয়ে দেখছে তার বন্ধুদ্বয় বের হয় কি না। এক সময় প্রতিক্ষার পহর শেষ হয়, ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত ব্যক্তি ফেরদৌস আর রিপনকে একসাথে বের করে নিয়ে হাসপাতালে পাঠাতে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করে জেনে নিলো এই সব রোগী কোন কোন হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। মার্কেটের পাশেই মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল আর সেখানেই প্রেরণ করা হচ্ছে। নিতু আর বাবু সেখানে চলে গেলো, খুঁজে পেলো দুই বন্ধুকে। খুব বেশি একটা ক্ষতি হয়নি, ধোয়ায় দূর্বল হয়ে গেছে আর চাল থেকে ছুটে পড়া কাঠের আঘাতে পিঠে ব্যথা পেয়েছে দুজন। ডাক্তারের সাথে কথা বলে জেনে নিলো কোনদিন তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিবেন। ডাক্তার একদিনের কথা জানালেন।

এদিকে রুমমেটদের আসতে দেরি দেখে অস্থির অভ্র। হোস্টেল ইনচার্জ সাচ্চুর নিকট দৌড়ে গেলো অভ্র। হাপাতে হাপাতে উপস্থিত অভ্র, হাপানো দেখে সাচ্চু জিজ্ঞেস করলো-তোমার কি হয়েছে, তুমি এতো হাপাচ্ছো ক্যানো, আর এই সন্ধ্যার সময় তুমি এখানে। তুমি তো সচারচর এভাবে বের হওনা।
ভাইজান, ভাই—জান, নিতু, বাবু, রিপন, ফেরদৌস কেউ রুমে আসেনি।
ও এই ব্যাপার, এতো চিন্তা করছো ক্যানো এটা তো ওদের নিত্যদিনের রুটিন। ওরা যত দূরে থাকে ততই তো তোমার ভালো।
ভাইজান ওরা তো আজ মার্কেটে গেছে, আর আমি রেডিওতে সংবাদ শুনতে পেলাম নিউমার্কেটে আগুন ধরেছে, সেখানে অনেকেই আহত হয়েছে এবং কয়েকজন নিহতও হয়েছেন। আমার নিকট তো মোবাইল নেই যে ওদের খবর নিবো। আপনি একটু দেখবেন কি..
কি বলো,
হ্যাঁ ভাইজান, আমি শুনেই তো চিন্তায় আছি। একটু দেখুন তো
আচ্ছা অভ্র তুমি একটা কথার জবাব দিবে-
পরে জিজ্ঞেস করবেন আগে ওদের খবর নিন।
সেটা নিবো, আর ওরা সবাই দুষ্টু এতো চিন্তা করো না। এখনি মোবাইল করে জেনে নিচ্ছি।
বাবুর মোবাইল বেজে উঠলো, কি বলবে আর কি জানাবে এই ভেবে প্রথম কলটি কেটে গেলো, এবার সাচ্চু একটু চিন্তায় পড়ে গেলো, ভাবতে থাকলো তাহলে কি ওদের কোনো সমস্যা হলো, ভাবতে ভাবতে আবার কল দিলো– হ্যাঁ, বাবু? তোমরা কোথায়?
কেঁদে বলে ফেললো আমরা হাসপাতালে।
কি হয়েছে, হাসপাতালে ক্যামন করে।
ভাই, মার্কেটে আগুন লেগেছিলো, আর আমরা সেখানে ছিলাম, আমি এবং নিতু বের হলেও ফেরদৌস আর রিপন বের হতে পারেনি। ওরা আঘাত পেয়েছে আর বেশি ধোয়া থাকার কারনে শ্বাসকষ্টের সমস্যা। ডাক্তার বলেছেন কালকে বাসায় নিতে পারবো, কিন্তু আমাদের হাতে তেমন টাকা নেই। হাসপাতালের এবং ওষধের খরচ দিতে পারছি না। যা ছিলো কিভাবে যে টাকাগুলো হারিয়ে ফেলেছি বলতে পারছি না। হাসপাতাল থেকে বহন করে যাচ্ছে কিন্তু আগামীকাল পরিশোধ করে ওদের বের করতে হবে।
কি বলো, আর কত টাকা লাগতে পারেন?
হাজার দশেক লাগতে পারে ভাই, কিছুটু হাসপাতাল বহন করেছে।
এতো টাকা এখন কোথায় পাবো, ঈদের আগ মূহুর্তে, সবাই তো কেনাকাটা করে ফেলেছে, আমার হাতে তো এতো টাকা নেই, বড়জোড় হাজার দুয়েক হতে পারে।
অভ্র ইশারা দিয়ে বললো আমার নিকট আছে,
অভ্র’র ইশারা বুঝে, সাচ্চু বাবুকে বললো-তোমাকে পরে কল দিতেছি, দেখি কি করা যায়।
আচ্ছা অভ্র তোমার সমস্যা কি? তোমার কাছে আছে সেটা তো আমিও জানি, কিন্তু তোমার টাকা হিসেবী টাকা, কলেজ খরচ দিয়েছো পুরো বছরের, আর যা আছে সেটা তোমার চলাফেরা আর খাওয়া-দাওয়ার জন্য।
ভাইজান-পরের টা পরে দ্যাখা যাবে কিন্তু আগে বন্ধুর বিপদ থেকে তো রক্ষা করতে হবে।
তোমাকে কি তারা কেউ বন্ধু হিসেবে মানে?
না মানলেও কোনো সমস্যা নেই ভাইজান। তিনি সবই দ্যাখেন সবই বুঝেন। আমি যে আপনাকে টাকা দিবো সেটা কিন্তু ওদের কাউকে বলবেন না। আপনি বলবেন ছাত্র তহবিল থেকে সংগ্রহ করেছি।
কি বলো এসব, আমি মিথ্যে বলবো না
প্লিজ ভাইজান, আপনি মোবাইল করে বলেদিন, সকালে আপনি টাকা ব্যাবস্থা করে ওদের আনতে যাবেন।

—-চলবে

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৯ টি মন্তব্য (লেখকের ৪টি) | ৫ জন মন্তব্যকারী

  1. দাউদুল ইসলাম : ০৪-০৭-২০১৮ | ১৮:৪৭ |

    বৃষ্টির বেলার পাঠে গল্প থাকলে আর কি চাই…।

    দারুন।

    GD Star Rating
    loading...
    • রুদ্র আমিন : ০৫-০৭-২০১৮ | ১০:৩৮ |

      পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাইজান।

      GD Star Rating
      loading...
  2. ইলহাম : ০৪-০৭-২০১৮ | ১৯:৩৭ |

    প্রিয় রুদ্র ভাই আপনার চমৎকার লেখাটি পড়তে গিয়ে মনে গেলো হুমায়ূন আহমেদ এর সেই উক্তিটি " মানুষ না চিনতে পারায় লজ্জার কিছু নাই কারণ সব মানুষ গুলো দেখতে অবিকল মানুষের মতো"। এখন বন্ধু না চিনতে পারাতে লজ্জার কিছু আছে কিনা সেটাই ভাবছি। অপুর্ব লিখেছেন। শুভকামনা রইলো।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • রুদ্র আমিন : ০৫-০৭-২০১৮ | ১০:৩৪ |

      বন্ধু চিনতে না পারাটা সত্যিই লজ্জার, যদি আমরা আমাদের চিনতে পারি তবে ক্যানো বন্ধু নয়, হ্যাঁ, বন্ধু তখনি চিনতে পারি না যখন আমি আমাকে চিনতে পারি না। অহংকার, দাম্ভিকতায় আমরা আমাদের হারিয়ে ফেলি।

      GD Star Rating
      loading...
  3. মুরুব্বী : ০৪-০৭-২০১৮ | ১৯:৪৮ |

    দ্বিতীয় খণ্ডে  বিশেষ মন্তব্য করার সময় আসে নাই। আরো পড়ে নেই; তারপর। Smile

    GD Star Rating
    loading...
    • রুদ্র আমিন : ০৫-০৭-২০১৮ | ১০:৩১ |

      আশা করছি আগামীদিন তৃতীয় পর্ব প্রকাশ করবো আর সেটাই হতে পারে শেষ পর্ব।

      GD Star Rating
      loading...
  4. রিয়া রিয়া : ০৪-০৭-২০১৮ | ২১:০৩ |

    দূর্ঘটনার বিবরণ আজ। অভ্র এমন কিছু করতে পারে অনুমান করছিলাম পড়তে পড়তে। অবশষে সেটাই ঘটেছে। চলুক আপত্তি নেই দাদা। পাঠক হয়ে তো আছিই। Smile

    GD Star Rating
    loading...
    • রুদ্র আমিন : ০৫-০৭-২০১৮ | ১০:৩৮ |

      মন্তব্যে ভালো লাগা, ধন্যবাদ

      GD Star Rating
      loading...
  5. সাইদুর রহমান১ : ০৬-০৭-২০১৮ | ৮:৫৭ |

    দারুণ রোল প্লে করছে। ধারাবাহিক লেখায় দারুণ আয়োজন।

    GD Star Rating
    loading...