আমরা যারা পাকিস্তানে জন্ম নিয়ে বাংলাদেশে বেড়ে উঠেছি তাদের স্মৃতি হতে এখনো মুছে যায়নি বাংলাদেশে সৃষ্টির প্রেক্ষাপট। মূলত পশ্চিম পাকিস্তান ভিত্তিক সেনাবাহিনীর অবৈধ ক্ষমতা দখল ও ২২ পরিবারের নিরবচ্ছিন্ন শোষণই ছিল পাকিস্তান ভাঙ্গার মূল ক্যাটালিস্ট। শেখ মুজিব তথা আওয়ামী লীগের রাজনীতিও একই প্রেক্ষাপটে ঘুরপাক খেয়েছে। সংখ্যাগুরুদের অধিকার কেড়ে নিয়ে সংখ্যালঘুর শাসন কায়েম, সামরিক জান্তাদের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠা বাইশ পরিবারের কাছে ফাইন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউটগুলো বর্গা দেয়ার ভ্রূণেই সুপ্ত হয়েছিল স্বাধীনতার বীজ। এ বীজ আওয়ামী লীগের ৬ দফা অথবা ১১ দফার ভেতর বড় হয়েছে এসব জাস্ট টকিং পয়েন্ট। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছিল তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচীতে মুগ্ধ হয়ে নয়, বরং অবৈধ ক্ষমতা ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। এ শোষণ ছিল সংখ্যালঘু কর্তৃক সংখ্যাগরিষ্ঠদের।
আজকের বাংলাদেশ ভৌগলিক সংজ্ঞায় স্বাধীন। তার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটা সীমানা আছে, আছে পতাকা। ব্যাস এতটুকুই! পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ করার যে মূল চেতনা তা এখন বেওয়ারিশ লাশ হয়ে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের অপেক্ষায় আছে। পাকিস্তানী শোষণকে রিপ্লেস করেছে লুটপাট। ২২ পরিবারের জায়গা দখল করেছে ২ পরিবার। শোষণের তাও কিছু লাজ-লজ্জা ছিল, যা আইডেন্টিফাই করতে অনেক সময় ম্যাগনিফাইং গ্লাসের প্রয়োজন হত। কিন্তু আজকের লুটপাটে কোন রাখঢাক নেই, নেই জড়তা; এক কথায় উদাম, নির্লজ্জ, বেহায়া, বেলাজ। রাষ্ট্রের সবকটা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বানানো হয়েছে ক্ষমতাসীনদের উদরপূর্তির নিরাপদ ভাগার। লুটপাট মহোৎসবের উচ্ছিষ্ট ভাগ-বটোয়ারা করার কাজে সংযুক্ত করা হয়েছে দেশের ব্যুরোক্রেসি, বুদ্ধিজীবী সহ শ্রেণী-ভিত্তিক সব পেশাদারদের। বিচারবিভাগকে বানানো হয়েছে সবজি এবং নিয়োগ দেয়া হয়েছে লুটপাট যন্ত্রের চৌকিদার হিসাবে। এখানে প্রধান বিচারপতির মাথায় বন্দুক রেখে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয় চৌকিদারের ভূমিকা ঠিকমত পালন করেনি বলে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ভোটাধিকারকে বানানো হয়েছে আলোমতি প্রেমকুমার যাত্রাপালার রঙ্গমঞ্চ। বাংলাদেশ এখন একব্যক্তির এক দেশ। এখানে স্বাধীনভাবে কথা বলা যাবেনা…লেখা যাবেনা… প্রতিবাদ এখন যাদুঘরে। এখানে ইচ্ছামত জন্মদিন পালন করাও অপরাধ। বাংলাদেশ এখন একক দেবতার দেশ। অনেকটা উত্তর কোরিয়ার মত, যেখানে ব্যক্তি কিম জং উং’ই দেশ! তিনি যা বলবেন তা-ই আইন, তা-ই শাসন, তা-ই বিচার, তা-ই রায়। এর বাইরে যা কিছু তার সবই নষ্ট, সবই শাস্তিমূলক অপরাধ।
স্বাধীনতার সংজ্ঞাকে আমি রবীন্দ্রনাথের দুই পাখী কবিতার আলোকে ক্লাসিফাইড করতে পছন্দ করি; এক, খাঁচায় বন্দী স্বাধীনতা, দুই, বনের মুক্ত স্বাধীনতা। বন্দী পাখির কিছু কিছু নিশ্চয়তা আছে যা বনের পাখির থাকেনা। যেমন অন্ন! দুবেলা দু’মুঠো খাবার দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েই মানুষ পাখিকে খাঁচায় আটকায়। তো আজকের শেখ হাসিনার স্বাধীনতা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের খাঁচার পাখির স্বাধীনতা; বন্দী, শৃঙ্খলিত! তোতা পাখির এই স্বাধীনতা সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায়ও কায়েম হয়েছিল। দু’বেলা দু’মুঠা অন্ন আর মাথার উপর ছাঁদ দিয়ে মানুষকে আফ্রিকা হতে ধরে আনা দাসদের মত স্বাধীনতা দিয়েছিল। কিন্তু সে সমাজ টিকেনি। কারণ মানুষ পশু নয়। মানুষের চিন্তাশক্তি আছে। শুধু আহার আর বাসস্থানই তার জন্য সব নয়। আজকের বাংলাদেশে চিন্তা করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। লেনিন, মাও, হো আর কিম’দের মত শেখ মুজিবকে এখানে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে দেবতা হিসাবে। গোটা জাতিকে বলা হচ্ছে হ্যামিলনের বংশীবাদকের পেছনে লাইন ধরতে।
উন্নয়নের চাইতেও আজকের পৃথিবীতে বেশী জরুরি মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তার নিশ্চয়তা। এসবের গ্যারান্টি থাকলে মানুষ তার নিজ প্রয়োজনেই খুঁজে নেবে উন্নয়নের পথ।
loading...
loading...
'আজকের লুটপাটে কোন রাখঢাক নেই, নেই জড়তা; এক কথায় উদাম, নির্লজ্জ, বেহায়া, বেলাজ। রাষ্ট্রের সবকটা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বানানো হয়েছে ক্ষমতাসীনদের উদরপূর্তির নিরাপদ ভাগার। লুটপাট মহোৎসবের উচ্ছিষ্ট ভাগ-বটোয়ারা করার কাজে সংযুক্ত করা হয়েছে দেশের ব্যুরোক্রেসি, বুদ্ধিজীবী সহ শ্রেণী-ভিত্তিক সব পেশাদারদের। বিচারবিভাগকে বানানো হয়েছে সবজি এবং নিয়োগ দেয়া হয়েছে লুটপাট যন্ত্রের চৌকিদার হিসাবে।
গ্যারান্টি থাকলে মানুষ তার নিজ প্রয়োজনেই খুঁজে নেবে উন্নয়নের পথ।'
loading...
আমজনতা হিসেবেই ্থেকে গেলাম
loading...
মানুষ তার নিজ প্রয়োজনেই খুঁজে নেবে উন্নয়নের পথ >>> এটা সত্য।
loading...