জল কড়চা

রাজধানী শহর ঢাকাতে বসবাস করেন অথচ আজিকে সন্ধ্যার পরে নিজ নীড় হইতে বাহির হইলেন না, তাহারা ঘরকুনো তো বটেই আমি তো বলিব কাপুরুষও বটে! এমন আনাড়ী বৃষ্টির তুমুল পতনের পরে গুপ্ত প্রকৃতি যে কতটা উন্মুক্ত হইয়াছে তাহা যাহারা আজিকে বাহিরে ছিলেন তাহারাই দর্শন করিয়াছেন এবং সুখের সে বাতাসে অবগাহন করিয়াছেন। টানা বর্ষনের পরে ভূমি উপরিমণ্ডল ছিল কাচের ন্যায় স্বচ্ছ, বায়ু ছিল নির্মল ও ভরপুর যৌবনবেগ প্রাপ্ত। রাস্তাঘাটে জল কিছুটা জমিয়া ছিল বৈকি তবে বায়ুর তীব্র বেগের সাথে তাল মিলাইয়া সে জল যেন সমুদ্রের ঊর্মীর মতই দোল খাইতেছিল। এমন বাতাস ও জলের উপস্থিতে নগরের রাস্তাঘাট, বাজার, অফিস আদালাত সবকিছুই ছিল শীতল। শীত যে আসি আসি করিতেছে তাহার অন্য আরও একটি লক্ষণ অবশ্য দেখা যাইতেছিল নগরের রাস্তায় রাস্তায়। পিঠা বিক্রেতা ছেলে বৃদ্ধ্বাদের ভ্যান গাড়ি মাটির চুলায় পিঠা সমেত দৃশ্যমান হইতেছিল যায়গায় যায়গায়। ডুবন্ত তেলে ময়দা ভাজিয়া ও সরষে ভর্তাযোগে তাহা পরিবেশনের দৃশ্য ছিল চোখে পরিবার মতই।

রাজপথে ছিল না ট্রাফিকপুলিশের বাড়াবাড়ি রকমের ব্যস্ততা, ছিল না একতলা কিংবা দ্বিতল বাসের ঘনঘন যাতায়েত। রিক্সার আধিক্য ছিল চোখে পড়িবার মতই। টুং টাং বেলের শব্দে পথঘাট যেন ফিরিয়া গিয়াছিল সত্তর কিংবা আশির দশকেই।

চা প্রিয় বাঙালীর সমস্ত আড্ডা আজ জমিয়াছিল সন্ধ্যার পরে চায়ের দোকানগুলোতে। দোকানিরা আজ চা বানাইতে বানাইতে হিমশিম খাইতেছিল বটে তবে অধিক বিক্রির হেতু উহাদের মনে যে বাড়তি খুশির বাতাস দোল খাইতেছিল তাহার কিছুটা ছাপ চোখেমুখেও দেখা যাইতেছিল। যা খাওয়াইয়া এবং খাইয়া দোকানী ও খরিদদার উভয়েই ছিল বেশ তুষ্ট।

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে যাহারা নিয়মকরেই খিচুড়ি খাইয়াছেন তাহারা আজ আর খিচুড়ির দিকে না যাইয়া রাত্রের খাবারের মেন্যুতে যোগ করিয়াছেন সবজীর বাহারী পদ। তবে ব্যাচেলদের কারও কারও সাথে কথা বলিয়া জানা গিয়াছে যে তাহারা তাহাদের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যতালিকায় কোনরূপ পরিবর্তন না আনিয়া আজিকেও ডিম দিয়াই হাত কচলাইয়াছেন।

টানা দুই দিনের সাপ্তাহিক বন্ধ ও যুগপৎ বৃষ্টির এই ছন্দময় পতনে বাস ও মিনিবাস যেমন ছিল প্রায় ফাঁকা তেমনি নগরীর শপিংমলগুলোতেও ছিলনা তেমন কোন হৈহুল্লোড়। তবে আজিকে সন্ধ্যার পরে কিছুটা শোরগোল দেখা যাইতেছিল স্থানে স্থানে। ইহা যে রাজনৈতিক আয়োজন নয় বরং প্রাকৃতিক আহ্বানের ফল তাহা বুঝিতে হইলে ফেলু মিত্তির হইতে হইবে না।

বৃষ্টির হরেক রকম দুর্ভোগের সাথে সবথেকে উল্লেখযোগ্য দুর্ভোগ ছিল রাস্তায় জল জমিয়া গিয়া তাহা সড়ক হইতে নদীতে রূপান্তরিত হওয়া এবং ইন্টারনেট সংযোগ ক্যাবলে জল জমিয়া গতি ধীর হইয়া যাওয়া।
নগরবাসীর তাই আশা, বৃষ্টি যেমন ছুটির দিনে ভালই রোমাঞ্চকতা দিয়াছে তেমনি কর্মময় দিনে যেন বেরসিকতা না ঘটায়। রাত পোহালেই আবার বৃষ্টি হইবে কি হইবে না তাহা জানিবার জন্য আবহাওয়া অফিসের নিকট ধরনা দিতে হইলেও উহাদের উপরে যে জনগন খুব একটা আস্থা রাখিতে পারিতেছেন না তাহা তো সকলেরই জানা কথা। আস্থাটা তাই এবার বাড়িয়া গিয়াছে রেইনকোট ও ছাতা বিক্রেতাদের উপরেই।

– ছবিঃ গুগল

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২২-১০-২০১৭ | ৭:১২ |

    মফস্বলে রাস্তায় জল না জমলেও দারুণ বিড়ম্বনায় পেরুলো দুটি বৃষ্টি দিন। অলস দিন।

    GD Star Rating
    loading...
  2. শেখ সাদী মারজান : ২২-১০-২০১৭ | ১৪:২৩ |

    https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_scratch.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_scratch.gifজলের যন্ত্রণায় ভূগছি https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_scratch.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_scratch.gif

    GD Star Rating
    loading...