এসো মা (জগজ্জননী না, শুধু আমার একার) এসো। রোজ রোজ তোমাকে কত ডাকি মা, তুমি তো জানো। আসার সময়ে তোমার বগলের ওই মোবাইল টাঁকশালটা আনতে ভুলো না। এখানে এসো মা, আমার বাড়িতে। কত পুতি পুতি তোমার পা এঁকেছি মা। দেখেছ তো! সবকটাই রাস্তা থেকে সোজা আমার বাড়িতে এসে ঢুকেছে মা। কিন্তু খুব সাবধান মা! পাড়াতে আজ সবাই এরকম এঁকেছে। ভুলেও ওদের ছাপে পা রেখে ওদের বাড়িতে ঢুকে ওদের খপ্পরে পড়ো না মা। ওরা খুব খারাপ লোক। ঘোষগিন্নী এত হাত পা নেড়ে ছেলের আমেরিকা থাকার গল্প করে। ওর আর তোমাকে কি দরকার মা! আর বিশ্বাসের বউটা তো খালি আমার সবকিছুই নকল করে। হ্যাঁ মা, তুমি বল্লে বিশ্বাস করবে না, আমি যা কিনব পরের দিনই সেটা ওর কেনা চাই। আমি যেদিন নিরামিষ খাব, ওরও তাই করা চাই। ওই তো দু টাকার মুরোদ। আমি জানি না কিছু ভেবেছে! ওদের গুষ্টিশুদ্দু সবার কেলেংকারী জানি মা। তুমি এসো তোমাকে আজ রাত জেগে সব বলবো। ভুলেও ওদের বাড়ি যেও না মা।
এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে …
মানে ওই তেতলার ঘুপচি ঠাকুর ঘরে। ওটাই আমাদের ঠাকুর দেবতার গেস্টরুম। তোমরা তো চাইলেই মানে হাত ঘোরালেই সব পাও। তাই ওখানে আর এসি টেসি লাগাইনি। আর লাগাব কি করে মা! তোমাকে সারা বছর কত ডাকাডাকি করি মা, বলো! তুমি তো সব জানো। প্রত্যেক বেস্পতিবার ডাকি রীতিমতো নকুলদানা খর্চা করে। এখন নকুলদানারও কি দাম বেড়েছে। তাও দিই তোমাকে। কিন্তু মা তুমি বাপু হাড়কিপটে। কিছুতেই মালকড়ি ছাড়তে চাও না। আচ্ছা ওই ধনসম্পত্তিগুলো নিজের কাছে আঁকড়ে রেখে কি করবে বলো তো! আমাকেই আজ সব দিয়ে যেও মা! ভুলেও অন্যদের দিও না মা। আমার ঘরে আলো করে থাকো মা। তাতে যদি বাড়ির আলোগুলো জ্বালাতে না হয় তাহলে ইলেকট্রিসিটির বিল কিছুটা কমবে। উফফ কি বেড়েছে মা ভাবতেও পারবে না। এত কাঁড়ি কাঁড়ি না লাগলে আর দুটো গড়াতে পারতাম। মা গো তুমি তো সবই বোঝো।
এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে …
তুমি থাকলে ঘরে নাকি শান্তি থাকে। তা আমার ঘরটা একটু গুছিয়ে দিয়ে যেও মা। মেয়েটা হোয়াটসঅ্যাপে একটা মালদার এনআরআই পটিয়েছে মা। একটু দেখো মা। ছেলেটা কেমন যেন উড়ু উড়ু গোছের। আর ওর বাপটা কেমন সন্দেহ সন্দেহ চোখে তাকায়। বাপটার চোখে আঙুল ভরে দিও মা। আর ওর মা টা কি অহংকারী মা! ছি ছি কি বলবো! টাকার গরমে ফুটছে। ওটাকে তোমার কাছে স্বর্গে টেনে নিয়ে রোজ তোমার বাসন মাজা, কাপড় কাচা, ঘর মোছার কাজ দিও মা। এসো মা সব বলবো তোমাকে আমার দুঃখের কথা। তোমাকে ছাড়া আর কাকেই বা বলবো বলো! হাজার হোক তোমার উইলের ওয়ারিশ তো আমিই। ছেলেটা এক্কেবারে বিগড়ে গেছে মা। কোথাকার কোন এক বোঁচা মেয়ের চক্করে ফেঁসে তার পেছনে টো টো করে ঘুরছে। মা গোঃ! মেয়েটার মুখের দিকে তাকাতেও ইচ্ছে করে না। জানো মা একদিন ছেলে বাথরুমে গেছে আর ওর ফেসবুক মেসেঞ্জার খোলা পড়ে আছে দেখে চুপিচুপি উঁকি মেরে দেখি, বিশ্বাস করবে না মা মেয়েটা সিগারেট খায়! আর বলে কি না, আমার বাপি তো হার্টের পেশেন্ট। আমাদের বিয়েতে বিশেষ কিছু দিতে পারবে না। তাতে আবার আমার হারামজাদা গুণধর লিখেছে আমার কিচ্ছু চাই না সোনা শুধু তোমাকে চাই। হে মা লক্ষ্মী তোমার দুটো পায়ে পড়ি মা ওই পেত্নীটার সঙ্গে ছেলের ব্রেক করিয়ে দাও মা। তোমাকে ইয়াব্বড় আনন্দনাড়ু দেব এলাচ দেওয়া। আর বেশী ডিম্যান্ড কোরোনা মা, জিনিসের দাম এখন আগুন।
এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে …
কত লোকে রাস্তায় যেতে যেতে কত কিছু কুড়িয়ে পায়। আমি কিছু তো পাইই না উল্টে কত্তার অফিসের উপরিগুলো কমে যাচ্ছে। নতুন একটা ম্যানেজার এসেছে মা, একেবারে কি বলবো! শকুনের অধম। রাতদিন আমার কত্তার পেছনেই পড়ে আছে। ওর জ্বালায় কারো কাছে কিছু নিয়ে যে কোনো কাজ করে দেবে সে উপায় থাকছে না মা। ওটাকে ট্রান্সফার করিয়ে দাও মা। আমিও বাঁচি তুমিও বাঁচো। মানে আমার কিছু এলে তো তোমাকে তার পার্সেন্টেজ দিই বলো তুমি! দিই না! এই তো গতবছরই তোমার প্রেমিক কৃষ্ণর রূপোর বাঁশি কিনে দিয়েছি। দেখো মা লক্ষ্মী সোনা মা আমার। শুধু আমাকেই দেখো মা, অন্যদের নয়। গুটি গুটি পায়ে ঝুপ করে আমার বাড়িতে ঢুকে লুকিয়ে থাকো মা, যাতে অন্যরা তোমাকে খুঁজে না পায়, হিহিহি …
এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে
আমার এ ঘরে থাকো টাকা বোঝাই করে…
loading...
loading...
শুভ লক্ষী পুজোর শুভেচ্ছা…
loading...
এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে
আমার এ ঘরে থাকো টাকা বোঝাই করে।
loading...