অবয়ব (পর্ব-২)

অবয়ব (পর্ব-২)

তানিম ভাবতেই পারছে না সে এতোদিন কাকে দেখে এসেছে, ভাবতে ভাবতে মাথাটা আউলা ঝাউলা করে দিচ্ছে, কে এই করিম সাহেব যে সুর্পণার বাড়িতে আছে? আমি কাকে দেখলাম তাহলে, এতো বছরের সম্পর্ক, এতোটা কাছাকাছি থেকেছি দুজন, এখনো গায়ের ঘ্রাণ অনুভব করতে পারি আর তাকে চিনতে আমার ভুল হবে! না তা কখনোই সম্ভব নয়।

আচ্ছা কে এই করিম সাহেব, বয়সটা তার অনেক ভারি মনে হলো, আমার থেকেও কম করে হলেও দশ পনের বছরের বড় হবেন, আর সুর্পণা তো আমার থেকে তিন বছরের ছোট ছিলো, এতো রুপবতী, সুর্দশনা, আধুনিক মেয়ে কি এতো বয়স্ক একজন পুরুষকে বিয়ে করবে? আর করবেই বা ক্যানো, কোন দিক থেকে তার কমতি ছিলো, অর্থ-সম্পদ, টাকা-কড়ি কোনোটাই তার কম ছিলো না। নাহ্‌ আর ভালো লাগছে না, আমার দ্যাখা তো ভুল হতে পারে না। করিম সাহেব তো বললেন আগামী শুক্রবার দ্যাখা করার জন্য, আমার কোনো ভুল হচ্ছে না তো।

নানা প্রশ্ন আজ কুরে খাচ্ছে তানিমকে, আর কুরে খাবেই না ক্যানো, যার এতো কাছে থেকেও তাকে দেখে ভুল করবে।

করিম সাহেব সোফায় গম্ভীর হয়ে বসে আছেন, ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করলেন করিম সাহেবের স্ত্রী, হঠাৎ করেই থমকে গেলেন, তাকিয়ে আছেন স্বামীর দিকে, ভাবতেই পারছেন না এতো চঞ্চল প্রাণবন্ত একজন মানুষ হঠাৎ করে এতো গম্ভীর হয়ে গেলো কি করে। পঁচিশ বছরের সংসার জীবনে এমনটি তো কখনোই দেখেননি, আজ আবার কি হলো। হাটিহাটি পা পা করে এগিয়ে দিয়ে করিম সাহেবের পাশে গিয়ে বসলেন কর্ণিয়া।

আসলে করিম সাহেবের স্ত্রীর নাম কর্ণিয়া, আদর এবং ভালোবাসায় তিনি কণা বলেই ডাকেন। এক সন্তানের জননী তিনি। মেয়েটির স্বভাব ঠিক মেয়ের মতো হয়েছে বলে প্রায় সময় করিম সাহেব খোটা দ্যান কর্ণিয়াকে। তিনি হাসি মুখে সবটাই উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এটা আমাদের ভালোবাসার রক্ত, অর্ধেকটা তোমার মতো আর বাকিটা আমার মতো।

-আচ্ছা করিম তোমার কি হয়েছে? অনেকক্ষণ যাবৎ বাসায় এসেছি আর তুমি দেখি বুঝতে পারোনি, তা তোমার কি হয়েছে? এতো গম্ভীর লাগছে ক্যানো? এতো বছরের সংসার জীবনে যা দেখিনি আজ তোমাকে দেখে ক্যামন জানি ভয় ভয় লাগছে। কি হলো কথা বলছো না ক্যানো, এই বয়সে কি কারো প্রেমে পড়লে নাকি? না আদর করবো কোনটা?

-করিম সাহেব উত্তেজিত হয়ে বললেন, তোমার প্রেমিকা এসেছিলো, আমাকে প্রশ্ন করে আমি এইবাড়িতে কি করি, এই বাড়িতো তার থাকার কথা কিন্তু আমি ক্যানো? তোমরা দুজন নাকি অন্তরঙ্গ মানুষ ছিলে, চুটিয়ে প্রেম করেছো কয়েক বছর, এই বাড়ি যে তোমার সেটা সে কি করে জানলো? তার প্রেমিকার বাড়ি বলে সে দাবি করে এটা তারও বাড়ি।

-তোমার মাথাটা কি খারাপ হয়ে গেলো নাকি? তোমার সাথে আমার পরিচয় ইউনিভার্সিটি জীবন থেকে, তবে এর ভেতর আমি কার সাথে লুকিয়ে প্রেম করলাম, প্রেম যদি করেই থাকি তবে ক্যানো এতোবছর পর? যাই হোক সেই বেয়াদব কি বলেছে?

-আমি তাকে শুক্রবার বাসায় আসতে বলেছি, বলেছি আপনার প্রেমিকার সাথে সরাসরি কথা বলুন, আমরা শুক্রবার ফ্রী থাকবো

-সে কি আসবে বলেছে?
-হ্যাঁ, সে আসবেই, তার নাকি আসতেই হবে।
-তাহলে কি আর করা, তুমি অন্তত শুক্রবার পর্যন্ত মন খারাপ করে থেকো না, তাকে আসতে দাও দেখি কে সে

চলবে….

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ১ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৪-১০-২০১৭ | ১১:২৬ |

    অবয়ব প্রথম পর্ব পড়ে অনুমান করতে পারিনি এটা একটি গল্পের দিকে এগুবে। দ্বিতীয়াংশে মনে হচ্ছে লিখাটি সত্য সত্যই দারুণ কিছু একটার দিকে এগুচ্ছে।
    অভিনন্দন মি. রুদ্র আমিন। এগিয়ে নিন। ভালো লাগবে। Smile

    GD Star Rating
    loading...