বন্ধু তোদের কাছে আমার অনেক ঋণ!

বন্ধু তোদের কাছে আমার অনেক ঋণ!!!!!

“সুসময়ে অনেকেই বন্ধু হয়,
অসময়ে কেউ কারো নয়””।

যখন মানুষের ভাল সময় আসে তখন অনেক বন্ধু জুটে যায়। কিন্তু সঠিক বন্ধুকে বুঝতে না পারলে মহাবিপদের সম্মুখীন হতে হয়। বাস্তবে সঠিক বন্ধু নির্বাচন করাই হচ্ছে সবচেয়ে সঠিক কাজ। অথচ মানুষ পরিচিত হন, তার বন্ধুদের মাধ্যমে। ইংরেজীতে কথা আছে-
“A man is known by the company he keeps”।

সঠিক বন্ধুই হচ্ছে সৎ পথের পরিচালক, উন্নতির সোপান, অন্তরের আত্মীয়। আপন মানুষ অনেক সময়ে হাত ছেড়ে দেয় কিন্তু প্রকৃত বন্ধু কখনোই হাত ছেড়ে চলে যায় না, বন্ধুত্ব হচ্ছে সোনালী সুতো যা হৃদয়কে একসূত্রে গেঁথে দেয়। ইংরেজীতে প্রবাদ আছে,

“Only your real friends tell you when your face is dirty, life without a friend is like death without a witness. Ì Walking with a friend in the dark is better than walking alone in the light. Ì Only unsinkable ship is FRIENDSHIP”

সঠিক বন্ধু কে বা কারা, এবং কিভাবে তাকে নির্বাচন করা যাবে এ নিয়ে অনেক মতবাদ আছে। চাণক্য শ্লোকে সঠিক বন্ধুর পরিচয় বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে, “দুর্ভিক্ষে, রাষ্ট্র বিপ্লবে, রাজার দুয়ারে ও শশ্মানে যে তোমার পাশে থাকবে সেই প্রকৃত বন্ধু”। যে আমার আগে, অথবা যে আমার পিছু চলে, সে আমার বন্ধু নয়; সেই আমার বন্ধু যে আমার পাশে পাশে চলে”।

আমারা জানি এই বন্ধু দিবসের সূচনা কি করে হলঃ
১৯৩৫ সালে আমেরিকার সরকারি বাহিনীর হাতে খুন হন এক ব্যাক্তি।তার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে সে নিহত ব্যাক্তির এক বন্ধু আত্মহত্যা করেন। সেই আত্মহত্যাকারী ব্যাক্তির প্রতি সন্মান দেখিয়ে, এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বন্ধুর প্রয়োজনীয়তার প্রতি সন্মান দেখিয়ে, আমেরিকার সরকার ১৯৩৫ সালে আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার বন্ধু দিবস ঘোষনা করে। আর যেহেতু, রবিবার আমেরিকাতে সাপ্তাহিক ছুটির দিন তা্ই, রবিবারকেই বেছে নেয়া হয়। আস্তে আস্তে সারা পৃথিবীতে এই দিবসের প্রচলন শুরু হয়। কিন্তু আমেরিকার সাথে তারিখ মিলিয়ে সব দেশে এই দিন পালন করা হয় না। কারন এই বন্ধু দিবস কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঘোষনা হয়নি। আমেরিকার এ দিবসের সাফল্য দেখে অন্যান্য দেশও তা পালন করতে থাকে।

যাদের প্রতি মুহূর্তের সঙ্গী বন্ধু আর বন্ধুতা, তারা একমুহূর্তের জন্যও মন থেকে আড়াল করতে পারেন না বন্ধুদের। জীবনের সংকটে এরা ছুটে যান বন্ধুদের কাছে। আবার আনন্দ, উল্লাস কিংবা দিন শেষের অবসরেও এরা ভালোবাসেন বন্ধুত্বের কলতান শুনতে। বন্ধুত্বের পরিপূরক সম্পর্কের মাঝে এরা খুঁজে পান জীবনযাপনের ভিন্ন রস।

বন্ধুত্ব- তা শুধুই যে মানুষের সঙ্গে হবে এমন কোনো কথা নেই। বই হতে পারে সবচেয়ে ভালো বন্ধু। হতে পারে প্রকৃতি বা হালের কম্পিউটার। বন্ধুত্বের তাই চূড়ান্ত সীমানায় যেমন নেই দেশ-কাল-পাত্র, তেমনি নেই কোনো নির্দিষ্ট ছক। যে থাকবে কাছে, হাঁটবে পাশে, বিপদে হাত বাড়িয়ে দেবে, সে-ই প্রকৃত বন্ধু।
_____________

কিছু নিজের কথা :-

একটি ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে প্রতি রাতে ঘুমোতে যাবার আগে তার দাদাইএর পায়ের কাছে বসে কৃতজ্ঞতা জানাত। “থ্যাঙ্কিউ গড, ফর রেষ্ট এন্ড ফুড এন্ড লাভিং কেয়ার, এন্ড অল দ্যাট মেকস দ্যা ডে সো ফেয়ার। লাভ ইউ গড!” আর দাদাই তো চমকে উঠতেন আর বলতেন ‘ ওরে আমাকে নয় সর্বময় কর্তার কাছে প্রার্থনা জানা’, আর সেই মেয়েটি বলত তুমিই তো সেই কর্তা। আমি আর কাউকেই চিনি না। তখন দাদাই ছিল তার একমাত্র বন্ধু। আর ছিল খেলা- ধুলো আর পড়াশুনো নিয়ে ব্যস্ততা।

একটা সময় ছিল যখন অগনিত বন্ধু আর তাদের সবাই খুব আপন। পড়তাম কম খেলতাম বেশি। আজ ফেসবুকে বন্ধু দিবসের ছড়াছড়ি। খুব মনে পড়ছে ছোটবেলার সেই সব বন্ধুদের। তাদের সাথে আজ আর আমার দেখা হয় না কথাও হয় না। আজ একটা গান বার বার শুনছি “বন্ধু কি খবর বল- কতদিন দেখা হয় নি!!! কতদিন দেখা হয় নি- ( সুমন)।” এই গানটা মনে করিয়ে দেয় বন্ধুদের কথা।

মনে হয় এইতো সেদিন প্রথম যখন দাদাই এর হাত ধরে স্কুলে গিয়েছিলাম, আমার সে কি কান্না! কিছুতেই থামতে চায় না। ক্লাশ টিচারের শাড়ির আঁচলে চোখ মুছেও শেষ হয়নি চোখের জল। কিন্তু ক’মূহূর্ত পরেই তো সব ভুলে গিয়েছিলাম। সে তো শুধু বন্ধুদের পেয়ে। স্কুলে যেতে আমার কখনোই খারাপ লাগতো না। এইদিনও স্কুল ফাঁকি দিতে চাইতাম না। সবাই বলবে আহা ! কি ভাল মেয়ে। আসলে তো মূল কারন ছিল বন্ধুরা। আগের দিন পড়া গপ্পের বই, টিভি প্রোগ্রাম আর নানাবিধ টুকিটাকি – এসব কিছু হজম করার জন্য চাই বন্ধু। তার উপর আছে টিফিনের ফাঁকে নানান খেলা। মনে আছে ক্লাশে বসতাম প্রিয় বন্ধুরা সব একসাথে। তাদের অনেকেই আজ কোথায় হারিয়ে গেছে। স্কুল পাশ করার পর অনেকের সাথে আর দেখাই হয়নি কোন দিন।

কলেজের সময়টা খুব অল্প মাত্র তিন বছর। কোন মতে ক্লাস শেষ করে ছুট দিতাম কফি হাউসে না হলে হাতিবাগানে ।সব বন্ধুরা মিলে হাত ধরেই হাঁটতাম। মানুষ ফিরে তাকাতো। কিন্তু আমরা থোড়াই কেয়ার করি। সব সময় ব্যাগে হয়তো টাকা থাকতো না। তাতে কি, শখ তো আটকে থাকতো না। একদিন আমাদের বন্ধুরা মিলে এগরোল খেতে ইচ্ছে হলো। আমাদের ব্যাগ ঘেঁটে যা টাকা পেলাম তাতে একটা এগরোল কেনা যায়। ব্যাস তাই করা হলো। ওই একটা এগরোল আমরা সব বন্ধুরা ভাগ করে করে খেলাম। এখনতো ইচ্ছে করলেই আইসক্রীম বা ফুচকা, এগরোল খেতে পারি কিন্তু বন্ধুদের সাথে ভাগ করে খাওয়ার সেই স্বাদটা আজ আর পাই না। বন্ধু, তোদের অভাবে হয়তো।

আর আজকাল ফেসবুকে বন্ধুত্ব কত সহজ রিকোয়েস্ট অ্যাড করলেই বন্ধু। কি দারুন ব্যাপার। অমুক- তমুক এখন বন্ধু, কিন্তু এই ভার্চুয়াল জগতে যতই বন্ধু হোক সেই ছোটবেলার ফেলে আসা বন্ধুদের শূন্য স্থান যে আজো পূরণ হল না। বন্ধু নিয়ে এত কথা বললাম কিন্তু আমি জানি না আসলে বন্ধু কাকে বলে? একটা সময় মনে হতো Friendship is nothing but a name. আবার ভাবি সত্যিই কি তাই? কেন তবে অদর্শনেও প্রিয় কণ্ঠ থাকে স্মরণে অমলিন! বুঝে পাই না।
তবে কি ভালবাসা আর মমতাকেই আমরা আদর করে বন্ধু বলে ডাকি?

এক এক সময় ভাবি আবার যদি ফিরে পেতাম সেই সময়টা। সত্যি বলছি আর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আচার কিনতে যেতাম না। দুষ্টুমি করে বকুনি খেয়ে কারোর উপর রাগ বা অভিমান করতাম না। অ্যাসেম্বলি ফাঁকি দেবার জন্য মিথ্যা অযুহাত বানাতাম না। বন্ধুদের সাথে একটুতেই ঝগড়া করতাম না, একটুতেই অভিমান করে বসে থাকতাম না।

আজ আমি ভীষন অনুভব করতে পারছি আমার সেই সব বন্ধুদের অনুপস্থিতি। সেই সব দুষ্টুমির দিনগুলো,আর আমার সেই সব বন্ধুদের। আজ একটা ব্যপার অনুধাবন করলাম ,আমরা যতই বড় হই না কেনো, যতই বড় পোষ্টে চাকরি করি না কেন, সেই ছোটবেলার বন্ধুরা একই রকম থাকে। আমাদের মনে। শুধু আমাদের জন্যই।

______________________

বন্ধু গ্রীষ্মের ক্লান্ত দুপুর
পৌষের স্নিগ্ধ শিশির,
শরতের শুভ্র পেঁজা মেঘ,
আর শিউলি ঝরা ভোর।

( বন্ধু দিবসে সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা। যারা আমার বন্ধু হয়ে আছে, যারা হারিয়ে গেছে এবং যারা হারানো অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।)

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৩ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৬-০৮-২০১৭ | ১৩:১০ |

    “বন্ধুত্বের চূড়ান্ত সীমানায় যেমন নেই দেশ-কাল-পাত্র, তেমনি নেই কোনো নির্দিষ্ট ছক। যে থাকবে কাছে, হাঁটবে পাশে, বিপদে হাত বাড়িয়ে দেবে, সে-ই প্রকৃত বন্ধু।”

    বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা প্রিয় কবিবন্ধু রিয়া রিয়া। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. আমির ইশতিয়াক : ০৬-০৮-২০১৭ | ২১:৩১ |

    Happy Friendship Day

    GD Star Rating
    loading...
  3. দীপঙ্কর বেরা : ০৬-০৮-২০১৭ | ২২:০৬ |

    শুভেচ্ছা। খুব ভাল লাগল লেখাটি। নিজস্ব অভিজ্ঞতায় দেখেছি সময় প্রেক্ষিতে কিছু বন্ধুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু কেউই সঠিক অর্থে সারাজীবন বন্ধুর মত আদৌ নয়। বরং অন্ধকারের হাতছানিতে হাত বাড়িয়ে বসে আছে। ভাল থাকবেন।

    GD Star Rating
    loading...