যাকে ধারণ করা হয় সেটা ‘ধর্ম’। অভিধানে শব্দটির অর্থ করা হয়েছে- স্বভাব, শক্তি (সংসদ বাংলা অভিধান), প্রকৃতি, প্রত্যেক জীব বা বস্তুর নিজস্ব গুণ (বাংলা একাডেমি অভিধান)।
.
অর্থাৎ প্রত্যেক বস্তু বা জীব যে স্বভাব, গুণ বা বৈশিষ্ট্য ধারণ করে সেটাই তার ধর্ম। প্রকৃতিতে এমন কোনো বস্তু বা শক্তি নেই যার নিজস্ব কোনো ধর্ম নেই। আর এই ধর্মকে অস্বীকার করে বা ধর্মনিরপেক্ষ থাকে- এমন সাধ্যও কারো নেই। প্রত্যেককে কোনো না কোনো ধর্ম ধারণ করতেই হয়। আগুনের ধর্ম পোড়ানা। আগুন যদি এই ধর্ম হারিয়ে ফেলে তাহলে সেটা কি আর আগুন থাকে? চুম্বক যদি তার আকর্ষণ ক্ষমতা হারায় তাহলে সেটাকে কি চুম্বক বলা যায়? যায় না। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে ধর্মকে ধারণ করার মধ্যেই বস্তুর সার্থকতা নিহিত।
.
একই কথা প্রযোজ্য মানুষের ক্ষেত্রেও। মানুষকেও কোনো না কোনো ধর্ম ধারণ করেই জীবনযাপন করতে হয়। এক্ষেত্রে মানুষের সামনে কেবল দুইটি রাস্তা। একদিকে ন্যায় ও সত্য, অন্যদিকে অন্যায় ও অসত্য। পরিণতিও দুইটি- শান্তি ও অশান্তি। এখন হয় তাকে ন্যায় ও সত্য ধারণ করতে হবে, নতুবা অন্যায় ও অসত্যকে।
.
আলো নেই মানেই অন্ধকার আছে, দিন নয় মানেই রাত। তেমনি কেউ সত্য ও ন্যায় ধারণ করল না মানেই সে অন্যায় ও অসত্যকে ধারণ করল। এখানে ধর্মহীন বা ধর্মনিরপেক্ষ থাকার চিন্তা যদি কেউ করেন সেটা হবে অলীক কল্পনামাত্র। তবে হ্যা, আপনি যদি ধর্ম বলতে মানুষের প্রকৃতিজাত গুণ বা বৈশিষ্ট্য না বুঝে কতগুলো আনুষ্ঠানিকতা, রীতি-নীতি, নির্দিষ্ট লেবাস, আর শাস্ত্র হাতড়ানোকে বুঝে থাকেন তাহলে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা অলীক বিষয় থাকে না। সেক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা যথার্থ বলেই প্রতীয়মান হয়।
আনুষ্ঠানিকতা, রীতিনীতি, পোশাক-আশাক কোনো সার্বজনীন ও শাশ্বত বিষয় নয়। ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের ভিন্ন ভিন্ন লেবাস, ভিন্ন ভিন্ন শাস্ত্র। প্রার্থনা পদ্ধতিও একেক সম্প্রদায়ের একেক রকম। সেক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাষ্ট্র যদি বলে, আমি কোনো বিশেষ শাস্ত্রের, বিশেষ লেবাসের, বিশেষ আনুষ্ঠানিকতার লোকের উপর অন্য কোনো বিশেষ শাস্ত্রের, লেবাসের ও আনুষ্ঠানিকতা পালনকারী লোকের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী নই, আমার কাছে সবাই সমান, তাতে দোষের কিছু নেই, বরং তেমনটাই সকলের কাম্য হওয়া উচিত। এই অর্থে ধর্মনিরপেক্ষতা অলীক তো নয়ই, বরং খুবই বাস্তবসম্মতই বলা চলে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে- ধর্ম তো বর্তমানের মত আনুষ্ঠানিকতা ও লেবাসসর্বস্ব বিষয় নয়।
.
মূল ধর্ম হচ্ছে ঐ ন্যায়, ঐ সত্য যা আমাদেরকে শান্তি এনে দিবে, যাকে ধারণ করে স্বার্থপর মানুষ পরোপকারী হবে, আত্মকেন্দ্রিক মানুষ আত্মত্যাগী হবে। ফলদায়ক বৃক্ষের ডাল-পালা থেকে শুরু করে শেকড়-বাকল পর্যন্ত, সবকিছুর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- ফল। সেই ফলটাই যদি না পাওয়া গেল তাহলে ডাল-পালা-লতা-পাতার কী মূল্য? ধর্মের আত্মা হলো ন্যায় ও সত্য। সেই আত্মাকেই যখন ভুলে যাওয়া হয়েছে, ধর্মকে যখন কেবল লেবাস-সুরত, আর আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে, ধর্মবিশ্বাসী মানুষের ঈমানকে অপব্যবহার করে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে, তখন স্বভাবতই ধর্ম তার আবেদন হারিয়েছে। আর সেই সুযোগে যুগের প্রয়োজনেই জন্ম হয়েছে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র। চিন্তাশীল ও যুক্তিশীল মানুষ ধর্মের নামে এই অন্ধত্ব, জড়ত্ব ও কুপমণ্ডূকতা দেখে ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে ওই ধর্মনিরপেক্ষতার ছাতার নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। ধর্মের প্রতি তারা এখন বীতশ্রদ্ধ!
.
আমরা হেযবুত তওহীদ যখন ধর্মের কথা বলি, ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত- সকল অঙ্গনে ধর্মের উপযোগিতা তুলে ধরি, তখন ঐ ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদে উদ্বুদ্ধ লোকগুলো মনে করেন আমরাও বুঝি প্রচলিত আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব, পোশাকী ধর্মের কথাই বলছি। ফলে পুরো বক্তব্য না শুনেই অনেকে আমাদেরকে ভুল বোঝেন, তিরস্কার করেন। তারা কবে অনুধাবন করবেন যে, ধর্ম কোনো আনুষ্ঠানিকতার নাম নয়? তারা কবে বুঝবেন- সত্যই ধর্ম, আর মিথ্যাই অধর্ম?
প্রয়োজনে – ০১৭২২ – ৬০৬০৪৫।
loading...
loading...
নিবন্ধটি পড়লাম। লিখায় যুক্তি আছে।
loading...